Pages

International

১.BRICS এর ধারনা দেন?
উ: Jim O’Neill

২. ‘One Belt, One Road’ এর নতুন নাম?
উ: Belt and Road Initiative
৩. BRI এর প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়?
উ: ১৪-১৫ মে, ২০১৭ বেইজিং
৪. ভৌগলিকভাবে গ্রিনল্যান্ড দ্বীপ অবস্থিত?
উ: উত্তর আমেরিকা মহাদেশে
৫. GATT চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল?
উ: ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি
৬. ম্যাগনাকার্টা (১৫ জুন,১২১৫) চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল কোথায়?
উ: রানিমেড দ্বীপ, ইংলান্ড
৭. International Chamber of Commerce সদর দপ্তর?
উ: প্যারিস, ফ্রান্স
৮. SPM in Environmental Science?
উ: Suspended Particulate Matter
৮. Love Story গ্রন্থের লেখক?
উ: Erich Segal, এরিক শেগাল
৯. বিশ্ব শরণার্থী দিবস?
উ: ২০ জুন
১০. বারলেভ লাইন কোথায় অবস্থিত?
উ: ইসরাইলে অবস্থিত পৃথিবীর অন্যতম সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা ব্যুহ
১১. পরিবেশের উপর প্রথম আন্তজাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়?
উ: জুন, ১৯৭২
১২. ওপেকভুক্ত দেশ কতটি?
উ: ১৪ টি
১৩. ফ্রান্স ন্যাটোর সামরিক কমান্ড থেকে বের হয়ে যায়?
উ: ১৯৬৬ সালে (যোগ দেয় ২০০৯)
১৪. মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী?
উ: পুত্রজায়া
১৫. মলোটভ রিবেন থ্রোপ চুক্তি সাক্ষরিত কাদের মধ্যে?

উ: স্ট্যালিন ও হিটলার, August 23, 1939.

 

প্রশ্নঃ প্যারিস চুক্তি । বিশ্ব জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলায় এ চুক্তি কতটুকু ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন? COP -22 সম্মেলনে এর ব্যাপারে কি অগ্রগতি সাধিত হয়েছে আলোচনা করুন।

________________________________________________
:
উত্তরঃ আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশে এই ধরণীর বুকে একদিন প্রাণের আবির্ভাব ঘটেছিল। টিকে থাকার জন্য সভ্যতার পরতে পরতে স্থান করে নেয় উন্নত মস্তিষ্কবান মানুষ। তবে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ধার না ধেরে কেউ কেউ প্রতিনিয়ত ঘটাতে থাকল বাছ-বিচারহীন কর্মকাণ্ড। তাই জীবকূলের বিপরীতে প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য অনেকাংশে দায়ী মানুষই। তাই বুঝি মহাত্ম গান্ধি বলেছিলেন-
“Earth provides enough to satisfy every man's needs, but not every man's greed. ”
একসময় পৃথিবীতে আসল প্রযুক্তির জ্ঞানে জ্ঞানী মানুষ। সূচিত হল অভিজাত হবার নিমিত্তে প্রতিযোগিতা করে প্রকৃতির সাথে মানুষের আপোষহীন সংগ্রাম। সৃষ্টির সেরা জীবের কর্মকাণ্ড দেখে হতাশ হয়ে Joseph Wood বললেন-
“The human race will be the cancer of our planet. ”
চিন্তাশীল মানুষের ধারণাগুলো অবশেষে সত্যি হলো । ক্রমাগত নষ্ট ও ধ্বংস হতে থাকল পরিবেশের ভারসাম্য। যার অনিবার্য পরিণতি জীবকুলের সম্মুখে হাজির হল জলবায়ু পরিবর্তন রূপে।
দুনিয়াকে জীবের বাঁচার উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য একসময় ত্রাতারূপে আবির্ভুত হল জাতিসংঘসহ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯৪ সালের মার্চ মাসে কার্যকর হয় জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতিসংঘ কনভেনশন UNFCCC. কার্যকর হবার পর থেকেই UNFCCপ্রতিবছর Conference of the Parties বা সংক্ষেপে COP নামে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে। যার ধারাবাহিকতায় ১২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনে (COP-21) বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কার্বন নির্গমন কমানো ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়।
প্যারিস চুক্তিঃ
____________
☛ "Adoption of the Paris agreement" বা প্যারিস চুক্তি জাতিসংঘের UNFCCC এর অধীন জলবায়ু সংক্রান্ত একটি খসড়া চুক্তি।
☛ ১২ ডিসেম্বর বিশ্বের ১৯৫ টি দেশ ও ১টি সংস্থা ৩২ পৃষ্ঠার প্যারিস চুক্তিটি অনুমোদন দেয় প্যারিসের লা বুর্জেতে। চুক্তিটিতে বলা হয়েছিল ২২ শে এপ্রিল ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালের ২১ শে এপ্রিলের মধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব উচ্চ পর্যায়ের একটি সভায় স্বাক্ষর গ্রহণের পর ২০২০ সাল হতে বাস্তবায়ন আরম্ভ করবে।

:
:
প্যারিস চুক্তির গুরত্বঃ
__________________
☛ কিয়োটো প্রটোকলের ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে প্যারিস চুক্তি হবে নতুন আশার প্রদীপঃ কিয়োটো চুক্তি থেকে একের পর এক প্রভাবশালী শিল্পোন্নত রাষ্ট্রসমূহের সরে অাসার ফলে পরিবেশবাদী ও সচেতন বিশ্ববাসীর মাথায় চিন্তার যে ছাপ পড়েছিল তা প্রশমিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
.
☛ অর্থায়ন করবে ধনী দেশগুলোঃ ২০২০ সাল পর্যন্ত ধনী দেশগুলো থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ সংগ্রহ করা হবে। ২০২৫ সালের পর অর্থের পরিমাণ পরিবর্তিত হবে । অার তাই ধনী দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
.
☛ জবাবদিহিতাঃ বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই চুক্তি মূলত একটি আইনগত ভিত্তি। এর মাধ্যমে যেসব দেশ তাদের লক্ষ্য পূরণ না করতে পারবে তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
.
☛ বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রক্ষেপণঃ ২১০০ সালে বৈশিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা । বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের (৩ দশমিক ৬ ফারেনহাইট) ‘বেশ নিচে’ রাখতে হবে এবং তা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
.
☛বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চুক্তি না মানা হলে ২১০০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে দাঁড়াতে পারে। তবে চুক্তি মানলে ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব।
.
☛ কার্বন নির্গমনঃ যত দ্রুত সম্ভব দেশগুলোকে তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে এবং চলতি শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ নির্ধারিত মাত্রার নিচে নামিয়ে আনতে হবে।
☛ পর্যালোচনা পরিক্রমাঃ ২০২৩ সালঃ প্রতি ৫ বছরে পর্যালোচনা হবে। ১ম পর্যালোচনা হবে ২০২৩।
.
☛ দায়িত্বভাগঃ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থ সহায়ত দেবে উন্নত রাষ্ট্রগুলো অন্যান্য দেশগুলো স্বেচ্ছাকর্মী হিসেবে কাজ করবে ।
.
☛ জলবায়ু ক্ষতিঃ জলবায়ু পরিবর্তনে অনুন্নত দেশগুলোর ক্ষতি পূরণে বৈশ্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ ।
.
☛ ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের জন্য স্বস্তির সংবাদঃ এ চুক্তি বাস্তবায়িত হলে ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে।
: COP-২২ সম্মেলনঃ
________________
☛ স্থান : মরোক্কোর মারাক্কেশ ।
.
☛ ২২ তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ৭ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর মরক্কোর মারাক্কেশ শহরে।
.
☛ এতে অংশগ্রহণ করে ১৯৩ টি দেশ।
.
☛ ১৫ ও ১৬ নভেম্বর, ২০১৬ ইং তারিখে এর উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
.
COP-22 এর গুরত্বঃ
_________________
☛ এ সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য বিষয় দুটি।
এক, মারাক্কেশ ঘোষণা।
দুই, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ক অগ্রগতি।
☛ এক পৃৃষ্ঠার মারক্কেশ ঘোষণায় -
- বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাকে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অঙ্গীকার করেছে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলো।
- টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণকে এই ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত করেছে।
- স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর জন্য দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়রকেও গুরত্ব দেয়া হয়েছে।
- জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় জলবায়ু তহবিলে রাষ্ট্রগুলোকে ২০২০ সালের মধ্যে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার অাহ্বান জানানো হয়েছে।
- গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের বিষয়ে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় করা এবং সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রতি অাহ্বান জানানো হয়।
- অারো বলা হয়েছে, এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা যাতে অারও ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশী না বাড়ে সেজন্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়েছে।
☛ এ সম্মেলনে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে যে অগ্রগতি হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো এতে অংশগ্রহণকারী ১৯৩ টি রাষ্ট্র প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছে।
.
☛ ট্রাম্প নির্বাচিত হবার পর এই চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে যে অাশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছিল, মার্কিন প্রতিনিধিরা তা প্রাথমিকভাবে দূর করার চেষ্টা করেন। তবে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তনের অাশঙ্কা করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
:
পরিশেষে Joseph wood Krutch- এর একটা উক্তি উল্লেখ করছি-
.
“If we do not permit the earth to produce beauty and joy, it will in the end not produce food, either.

অাজ যে সকল বিশ্বনেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির ব্যাপারে নিরুদ্বিগ্ন, ভাবলেশহীন, তারাই হয়তো অাগামীর প্রজন্মকে অস্বাস্থ্যকর, অনিরাপদ, প্রতিকূল ও বসবাসের অনুপযোগী পরিবেশের মধ্যে ফেলে দেয়ার দায় এড়াতে পারবেননা। তবে অনেকের অনেক নেতিবাচক ধ্যানের মাঝেও প্যারিস চুক্তি ও এর ধারাবাহিকতায় COP-22 কে অাগামী প্রজন্মের জন্য জীর্ণ, ব্যর্থ, মৃত, ধ্বংসস্তূপের ধরার বদৌলতে সুন্দর, বাসযোগ্য পৃথিবীর রেখে যাবার প্রত্যয় মনে করছেন বিশিষ্ট জনেরা। বিশ্লেষকদের নেতিবাচক ধারণাগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হোক। সফল হোক ১৯৫ টি দেশ ও ১ টি সংস্থার মহান উদ্যোগ।

 

   =======================

হরমুজ প্রণালী: ইরান ও আমেরিকার কাছে কেন এতোটা গুরুত্বপূর্ণ ?

মধ্যপ্রাচ্য থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় তেল রপ্তানি করা হয় হরমুজ প্রণালীর মাধ্যমে। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল যায় এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং অন্যান্য জায়গায়।
হরমুজ প্রণালীর একদিকে আছে আরব দেশগুলো। এসব দেশের মধ্যে আমেরিকার মিত্র দেশগুলো রয়েছে। হরমুজ প্রণালীর অন্য পাশে রয়েছে ইরান।
হরমুজ প্রণালীর সবচেয়ে সংকীর্ণ যে অংশ সেখানে ইরান এবং ওমানের দূরত্ব মাত্র ২১ মাইল।
এই প্রণালীতে জাহাজ চলাচলের জন্য দুটো লেন রয়েছে এবং প্রতিটি লেন দুই মাইল প্রশস্ত।
হরমুজ প্রণালী সংকীর্ণ হতে পারে। কিন্তু জ্বালানী তেল বহনের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাহাজ চলাচল করার জন্য হরমুজ প্রণালী যথেষ্ট গভীর এবং চওড়া।
পৃথিবীতে যে পরিমাণ জ্বালানী তেল রপ্তানি হয়, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ হরমুজ প্রণালী দিয়ে যায়।
এই প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন এক কোটি ৯০ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি হয়।
মালাক্কা প্রণালী দিয়ে জ্বালানী তেল রপ্তানি হয় এক কোটি ৬০ লাখ ব্যারেল এবং সুয়েজ খাল দিয়ে প্রতিদিন ৫৫ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি হয়।
হরমুজ প্রণালী হচ্ছে ইরানের জ্বালানী তেল রপ্তানির প্রধান রুট। ইরানের অর্থনীতির জন্য এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
ইরানের মোট রপ্তানি আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ আসে জ্বালানী তেল রপ্তানির মাধ্যমে। ২০১৭ সালে ইরান ৬৬০০ কোটি ডলারের তেল রপ্তানি করেছে।
ইরানের উপর আমেরিকা নতুন করে যে অবরোধ দিয়েছে তাতে তারা মোটেও খুশি নয়।
ইরান বলেছে, তাদের তেল রপ্তানিতে আমেরিকা যদি বাধা দেয়, তাহলে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে কোন তেল রপ্তানি করা যাবেনা।
ইরান বলেছে, হরমুজ প্রণালী দিয়ে যত তেল পরিবহন করা হবে সেটি তারা বন্ধ করে দেবে।
১৯৮০'র দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় এ ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় ইরাক এবং ইরান পরস্পরের তেল রপ্তানি বন্ধ করতে চেয়েছিল।
তখন জ্বালানী তেল বহনকারী ২৪০টি তেলের ট্যাংকার আক্রান্ত হয়েছিল এবং ৫৫টি ডুবে গিয়েছিল।

ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে চায় তাহলে সেটির কিছু নেতিবাচক দিক আছে। হরমুজ প্রণালী অশান্ত হয়ে উঠলে পৃথিবীজুড়ে জ্বালানী তেলের দাম বাড়বে।

 ===============================

প্রশ্নঃ সার্জিক্যাল স্ট্রাইক কি? সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পাক-ভারত সম্পর্কে কি ধরণের প্রভাব ফেলেছে?
উত্তরঃ ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি দেশের সংযোজন হয় পৃথিবীর মানচিত্রে। দক্ষিণ এশিয়ার জন্ম-শত্রু এ দেশ দুটির খোঁটা-খুঁটি লেগেই আছে যুগযুগ কাল ধরে। বিভিন্ন ইস্যুতে দেশ দুটির মধ্যে ইতোমধ্যে কয়েকটি যুদ্ধ সংগঠিত হয়। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে এ দুটি দেশের সম্পর্কের অবনতি বেড়েই চলেছে। বর্তমানে যোগ হয়েছে ভারত কর্তৃক পাকিস্তান সীমান্তে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নামক সামরিক অভিযান। ২৮-২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ইং তারিখে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তান সীমান্তে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পরিচালনা করে।
✪ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকঃ সার্জিক্যাল বলতে সামরিক অভিযান কে বোঝায়, যা কেবল একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ ধরণের অভিযান আশে-পাশের স্থাপনা ও জনগণের খুব কম ক্ষয়-ক্ষতি করে থাকে। নিম্ন ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে টার্গেটকে দ্রুত নিরস্ত্র করা সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের লক্ষ্য। এ অভিযানের প্রত্যেকটি সদস্য হল একজন প্যারাকমান্ডো। সেনাবাহিনীতে যে সাধারণ প্রশিক্ষণ হয়, এ প্যারাকমান্ডের প্রশিক্ষণ হয় তার চেয়ে অনেক উন্নত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সবচেয়ে বড় উদাহরণ পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন নেভিসিল দ্বারা পরিচালিত Operation Neptune spare।
✪ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পটভূমিঃ
বোরহান রুহানী নামে একজন হিজবুর মোজাহিদিন কর্মীকে কাশ্মীরে ভারত সরকার হত্যা করলে কশ্মীরে ভারত সরকার বিরোধী আন্দোলন আরম্ভ হয়। এর প্রতিবাদে ৮০ জনের বেশী বেসামরিক নাগরিক ও ১০০০ এর বেশী বেসামরিক নাগরিক আহত হয়।
এক দল অজ্ঞাত জঙ্গী ১৮ ই সেপ্টেম্বর উরিতে জঙ্গী হামলা চালিয়ে ১৭ জন ভারতীয় জওয়ানকে হত্যা করা হয়। পরবর্তিতে আহত আরও ২ জন জওয়ান মারা যায়। তবে ভারত এ হত্যাকাণ্ডের জন্য জায়েশ-ই-মোহাম্মদকে অভিযুক্ত করে। এর প্রতিবাদে ভারত পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়ে ৩৫-৫০ জনকে হত্যার দাবী করে।
ভারত দাবী করে যে, তারা পাকিস্তান ভারতের মধ্যবর্তী লাইন-অব-কন্ট্রোল বরাবর অভিযান চালায় । পাকিস্তান দাবী করে ভারত শুধু লাইন-অব-কন্ট্রোল বরাবর নয় বরং আরও সামনে এগিয়ে পাকিস্তানের বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং কয়েকজন সৈন্যকে আহত করে।
✪ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রভাবঃ
☛ সীমান্ত হত্যাঃ সীমান্তে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। সীমান্ত হত্যার ঘটনা মূলতঃ ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রত কাশ্মীরে বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলি অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে।
☛ দু দেশের সম্পর্কের অবনতিঃ নয়া-দিল্লীর পাকিস্তানের হাইকমিশনার মেহমুদ আখতারকে দেশে ফিরে যাবার আদেশ দেয় । পাকিস্তান ”পদ্মা নদীর মাঝি” অবলম্বনে নির্মিত “জাগো হুয়া সাবেরী ” নামক চলচ্চিত্রটি মুম্বাইয়ের চলচ্চিত্র আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানে প্রচার বন্ধ করে দেয়।
☛ সিন্ধুর পানি পাকিস্তানকে না দেওয়ার ঘোষণাঃ ভারত চুক্তি অনুযায়ী ভারত সিন্ধু নদের পানির ২০ শতাংশ চাষাবাদের জন্য ব্যবহার করে। পাওনা হলেও ভারত কখনো তার দাবী আদায়ে সচেষ্ট হননি। মোদী সিন্ধু নদের পানি পাকিস্তানকে এক ফোটাও না দেয়ার ঘোষণা দেয়।
☛ সীমান্তে সামরিক মহড়াঃ সীমান্তে পাকিস্তান এক বড় ধরণের সামরিক মহড়া করে । পাকিস্তান এ স্ট্রাককে “স্ট্রাইক অব থান্ডার’’ বলে আখ্যায়িত করে পাকিস্তান।
☛ সীমান্তে ভারতীয় সেনা মোতায়েনঃ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর ভারত পাকিস্তান সীমান্তে সেনা মোতায়েন করে । পাকিস্তান দাবী করে ভারত পাকিস্তান সীমান্তে ১০ লক্ষ সেনা মোতায়েন করেছে। তবে একসঙ্গে এত সেনা মোতায়েন করার ঘটনা পৃথিবীর কোথাও নেই।

পরিশেষে বলা যায় যে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে এসব ঘটনার কারণে এ দুদেশের তথা পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তা মূলতঃ পরমাণু শক্তিধর এ দুটি দেশের স্থিতিশীলতার উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কারণে সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতি পূর্বের ঘটনাগুলোর মতই সুফল বয়ে আনবেনা এমনটাই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তাই বিশ্বশান্তির বিষয়টি সামনে রেখে ভবিষ্যতের দিনগুলিতে যুদ্ধনীতি পরিহার করে শান্তি বয়ে আনুক- এমনটিই এ দু-দেশের পলিসি মেকারদের নিকট শান্তিকামী বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা।


==============================

https://drive.google.com/open?id=1KR5qLHMTF4GNpHKHzFOqbCyBPVOw1OHy

৩৮ তম লিখিত
ইসরাইল -ফিলিস্তিন সংকট
(বিবিসি রয়টার্স হতে পরিমার্জিত) 

ভূমিকাঃ
-----------
গত বছর ডিসেম্বরে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে ভাবিয়ে তুলেছে। বিগত ১৫ ফেব্রুয়ারি,২০১৭ তে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক বৈঠক শেষ সংবাদ সম্মেলনে দেশ দুটির মধ্যে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনা অনেকটা নাকচ করে দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন- দুটি পৃথক ও স্বাধীন রাষ্ট্র পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ওই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে বিশ্ব শক্তিগুলো। ট্রাম্পের বক্তব্যে সেই নীতিতে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেল।

এদিকে ট্রাম্পের বক্তব্যের পর বিশ্লেষকদের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- যদি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান না হয় তবে ওই আরব ভূখণ্ডটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিকল্প কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
*****************************************
ইতিহাসঃ
------------
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ভূখণ্ডগত সমস্যাটি বোঝার আগে সাম্প্রতিক অতীতের কিছু বিষয়ে নজর দেয়া আবশ্যক।
মূলত একই ভূখণ্ডকে কেন্দ্র করে এবং একই সময়ে আরব জাতীয়তাবাদ ও ইহুদি জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে। দুই জাতির লোকই বর্তমান বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ডটি নিজেদের বলে দাবি করে। তখনই প্রশ্ন ওঠে একটি ন্যায্য সমাধানের। দুটি আলাদা রাষ্ট্র সৃষ্টির মাধ্যমেই সমাধান খুঁজতে শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
১৯২১ সালে ফিলিস্তিন ভূখণ্ড থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হয় ট্রান্সজর্দান। এই ট্রান্সজর্দানেরই বর্তমান নাম জর্দান। আর তখন ফিলিস্তিন বলতে বুঝানো হতো বর্তমান ইসরায়েল, পশ্চিমতীর এবং গাজা ভূখণ্ডকে। ১৯৪৭ সালে হঠাৎ করেই একটি প্রস্তাবনা পাস করে জাতিসংঘ। এতে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে দ্বিতীয়বার বিভাজনের কথা বলা হয়। জর্দান নদীর পূর্ব ও পশ্চিম তীরকে কেন্দ্র করে এই বিভাজন পরিকল্পনা করা হয়।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, দুই ভূখণ্ডের যে অংশে ইহুদিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে সেখানে তারা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে। আর যেখানে ফিলিস্তিনি আরবদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে তখন এই প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করে আরবরা। তাদের অভিযোগ ছিল, ইউরোপ থেকে ইহুদিদের এনে আরব ভূখণ্ডে পুনর্বাসিত করে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের একটি অংশে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠে পরিণত করা হয়েছে।
এ নিয়ে ১৯৪৮ সালে হয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ। পশ্চিমতীর দখল করে নেয় জর্দান এবং গাজার নিয়ন্ত্রণ চলে যায় মিসরের হাতে। ১৯৬৭ সালে আরবদের সঙ্গে আরেকটি যুদ্ধ হয় ইহুদিদের। ছয়দিনের ওই যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয়। জর্দানেরও পরাজয় ঘটে এবং ইসরায়েল পশ্চিমতীর দখল করে নেয়। গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে বাধ্য হয় মিসরও।
এ সময় ইসরায়েলের বামপন্থিরা শান্তি রক্ষায় পশ্চিমতীরকে জর্দানের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি তোলে। এরই মধ্যে ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদ এবং মেনাখেম বেগিনের অধীনে ইসরায়েলে কট্টরপন্থার উদ্ভব ঘটে। এক পক্ষের দাবি ছিল, বৃহত্তর ইসরায়েল এবং অপরপক্ষের দাবি ছিল, বৃহত্তর ফিলিস্তিন। কেউই দুই রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে ছিল না।
পশ্চিমতীর ইসরায়েলের অধীনে রাখার পক্ষে দেশটির কট্টরপন্থিদের যুক্তি ছিল জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মীয় কারণ। ইহুদি ধর্মের ওপর ভিত্তি করে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেন তারা।
******************************************
সমাধানের বিভিন্ন রূপ
দুই রাষ্ট্র সমাধানঃ
----------------------
১৯৭৪ সাল থেকে অবশ্য দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথে হাঁটতে শুরু করেন ইয়াসির আরাফাত। ১৯৯৩ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে অসলো শান্তি চুক্তির পরে পশ্চিমতীর এবং গাজা উপত্যকায় ‘প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি’ (ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ) প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
পরবর্তী ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী- এহুদ বারাক, অ্যারিয়েল শ্যারন, এহুদ ওলমার্ট এবং বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু- সবাই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণাটি মেনে নিয়েছেন বলে জানান। তবে এই সময়ে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদি বসতি স্থাপনের কাজও চলতে থাকে।
ইয়াসির আরাফাত এবং তার উত্তরসূরী মাহমুদ আব্বাস ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কথা প্রচার করলেও কার্যত এটা কখনোই বাস্তব রূপ পায়নি। ২০০৯ সালে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন নেতানিয়াহু। কিন্তু আদর্শগত ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে কোনো ডানপন্থি ইসরায়েলি সরকারই এ ধরনের একটি রাষ্ট্রের উত্থান মেনে নেবে না।
এদিকে ২০০৭ সালে গাজার নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ইসলামপন্থি সংগঠন হামাসের হাতে। স্থানীয় নির্বাচনে দলটির কাছে পরাজিত হয় ফাতাহ। এতে আবারো দুইভাগে ভাগ হয়ে পড়ে প্যালিস্টিনিয়ান অথরিটি। পশ্চিমতীরের নিয়ন্ত্রণ থেকে যায় জাতীয়তাবাদীদের হাতে আর গাজার নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ইসলামপন্থি হামাসের কাছে।
ফিলিস্তিনের জাতীয়তাবাদীরা দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের ব্যাপারে রাজি হলেও এ ব্যাপারে ইসলামপন্থিদের কাছ থেকে সুস্পষ্ট কোনো বিবৃতি আসেনি। তবে তাদের আপত্তিকে ধর্মীয় বলেই মনে করা হয়। ভূমধ্যসাগর থেকে জর্দান নদী পর্যন্ত পুরো ভূখণ্ড ইসলামি শাসনের অধীনে থাকা উচিত বলে মনে করে ইসলামপন্থিরা।
******************************************
এক রাষ্ট্র সমাধানঃ
------------------------
বর্তমানে পশ্চিমতীরে বসবাসকারী ৪ লাখ ইহুদি- যারা পরে বসতি স্থাপন করেছে, তারা স্বেচ্ছায় ওই ভূখণ্ড ছেড়ে যেমন চলে যাবে না তেমনি তাদের জোর করে উচ্ছেদও সম্ভব নয়- এই নীতির ওপর ভিত্তি করে এক রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলা হয়। ইসরায়েলের কট্টর বামপন্থিরা এটাকে সবচে ভালো সমাধান বলে মনে করে। তবে ইসরায়েলি ডানপন্থিরা মনে করে, এটা হলে কয়েক বছরের মধ্যে পশ্চিমতীর এবং গাজায় ও ইসরায়েলি ভূখণ্ডে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি আরবদের সংখ্যা ইহুদিদের ছাড়িয়ে যাবে।
**রাষ্ট্রবিহীন এক ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছিলেন ইয়াসির আরাফাত**
আরবদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ইহুদিদের চেয়ে বেশি হওয়ায় এক সময় আরব ভোটার বেড়ে যাবে। আর এটা হওয়া মানে ইহুদিদের স্বায়ত্তশাসনের সমাপ্তি। তাছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুগোস্লাভিয়ার পতনের পর জাতীয়তাবাদের শক্তি আরো একবার প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য অনেকে মনে করেন, এক রাষ্ট্র সমাধান শুধু তাত্ত্বিকভাবেই যৌক্তিক। শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে শত্রুতা একটি দুঃসহ অবস্থা সৃষ্টি করবে।
********************************************
ত্রি-রাষ্ট্রীয় কনফেডারেশনঃ
----------------------------------
১৯৪৮ সাল থেকেই ফিলিস্তিন, জর্দান এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি কনফেডারেশনের বিতর্ক চলে আসছে। সাবেক ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বা এবান অনেকটা বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস এবং লুক্সেমবার্গের আর্থ-রাজনৈতিক সংস্থা ‘বেনেলাক্স’র মতো একটি ইউনিয়ন দাঁড় করতে চেয়েছিলেন। ছয়দিনের যুদ্ধ শেষে দেশটির লেবার পার্টি সরকার ‘অ্যালন প্ল্যান’ নামের একটি পরিকল্পনা হাতে নেয়। এতে বলা হয়, পশ্চিমতীরকে ইসরায়েল এবং জর্দানের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হবে এবং বাকি অংশ ফিলিস্তিনিদের হাতে থাকবে। সত্তরের দশকে অবশ্য ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদের উত্থানে এই ধারণা পরিত্যক্ত হয়। তখন থেকে জর্দান এবং মিসরও পশ্চিমতীর ও গাজার ব্যাপারে আগ্রহ আর দেখায়নি।
*******************************************
স্বায়ত্তশাসনঃ
-----------------
১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মেনাখেম বেগিন পশ্চিমতীর ও গাজার প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব করেন। এতে ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করবে ইসরায়েল। অসলো শান্তি চুক্তিতেও সীমিত স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হয়েছে। তবে উভয়পক্ষই মনে করে, এটি একটি অন্তর্বর্তীকালীন সমাধান।
********************************************
উপসংহারঃ
-----------------
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সমস্যা নিরসনে এ পর্যন্ত যত প্রস্তাবনাই দেয়া হয়েছে কোনোটাই কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে কী বিকল্প থাকতে পারে এ নিয়েও এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত পরিকল্পনা দাঁড় করানো যায়নি।
আপাতত বিষয়টি নিয়তির উপর ছেড়ে দেয়া ছাড়া কিছুই করার নেই নিরীহ নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের।
NILOY SEN GUPTA




=============================================

#বঙ্গবন্ধু_স্যাটেলাইট_১ স‍্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করলে আমাদের লাভ যা যা হবে :
(১) দেশের টিভি চ্যানেলগুলো বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ বছরে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় করে। সে টাকা এখন থেকে দেশেই থেকে যাবে।
(২) VSAT (Very-Small-Aperture Terminal) সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকেও বিদেশে টাকা খরচ করতে হবে না। ভারতের বিভিন্ন চ্যানেলে যেমন আমরা অনেক বিজ্ঞাপন দেখি Set Top Box এর!! এই Set Top Box হচ্ছে VSAT এ Access পাওয়ার একমাত্র certified যন্ত্র। এর মাধ্যমে আমরা ডিশ লাইন ছাড়াই বিভিন্ন চ্যানেল দেখতে পারব। এবং চ‍্যানেল গুলোর কোয়ালিটিও অনেক Improve হবে। ইতিমধ্যে অবশ্য দেশে RealVU, Bengal Digital ও Jadoo Digital এই তিনটি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করেছে। যদিও কাভারেজ এখনো ঢাকার ভিতরেই সীমাবদ্ধ!! তবে কোয়ালিটি এক্কেবারে জোস!! 🍹 🍹 HD Channel গুলো HD Television এ দেখলে পুরাই জীবন্ত মনে হয়!! 😃 😃
(৩) এছাড়াও স‍্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর খরচ অনেক কমে যাবে এবং ইন্টারনেটের স্পিড বৃদ্ধি পাবে 😃 😃 ক‍্যাবেল কাটা পরলে এখন যেমন আমাদের অবস্থা শোচনীয় হয়!! 😞 😞 ভবিষ্যতে তা আর হবে না 😛 😛 😛
(৪) রেডিও চ্যানেল গুলোর খরচ কমে যাবে সাথে কোয়ালিটি উন্নত হবে।
(৫) দেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস উন্নত হবে এবং Accuracy বাড়বে। আর কেউ বলতে পারবেন না তখন, “দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর যা বলে ঘটে তার উল্টাটা!!” 😄 😄
(৬) মহাকাশ বা জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা অনেক উন্নত হবে।
(৭) নেভিগেশন বা জ্বল অথবা আকাশ যানের ক্ষেত্রে দিক নির্দেশন আধুনিক ও উন্নত হবে।
(৮) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে। বাকি যে সবের প্রয়োজন নেই ঐ ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আয় হবে দেশের।
(৯) এছাড়াও আরো প্রায় ৩২টা সুবিধা পাওয়া যাবে এই স‍্যাটেলাইটের মাধ্যমে। তবে দেশের গোপনীয়তার কারণে সকল সুবিধার কথা জানানো হয় নি।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।


 =========================
ইরান-তুরস্ক ঐক্য : অস্বস্তিতে ইসরাইল
____________________­______________
মধ্যপ্রাচ্যের নতুন শক্তি তুরস্ক-ইরান সম্পর্ক এখন সহযোগিতার দিকে যাচ্ছে। সম্পর্কের ‘নতুন অধ্যায়’ রচনায় দেশ দু’টি অত্যন্ত আগ্রহী হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও আঞ্চলিক বিভিন্ন সঙ্কট নিরসনে তেহরান-আঙ্কারা ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করছে, যৌথ উদ্যোগে মনোযোগী হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায় রচনা করছে প্রতিবেশী দেশ দু’টি।
ইরান-তুরস্ক ঐক্য
তুরস্ক-ইরানের সম্পর্কের নতুন মেরুকরণের প্রমাণ- তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের ইরান সফর, ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্যকে ভবিষ্যতে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা, ইরাক ও সিরিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই ও আঞ্চলিক সঙ্কট সমাধানে অভিন্ন নীতি, ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন ঠেকাতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে একতা, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সর্বাত্মক উন্নয়ন ও অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষার সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কাতারের সাথে বাণিজ্য সুবিধার লক্ষ্যে বিকল্প স্থলবাণিজ্য পথ তৈরি, সিরিয়ায় দীর্ঘমেয়াদে শান্তির জন্য সঙ্কট নিরসনে সহযোগিতা করতে একমত হওয়া, পারস্পরিক মতপার্থক্য কমিয়ে আনতে সংলাপের সদিচ্ছা, রাশিয়ার সাথেও একসাথে কাজ করতে প্রস্তুতি গ্রহণ, কাতারে সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলো কর্তৃক অর্থনৈতিক অবরোধের ঘটনায় একই ধরনের প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন ইত্যাদি।
.
ইসলামিক স্টেট-বিরোধী (আইএস) যুদ্ধ, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এবং দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিস্তারের ক্ষেত্রে ইরান ও তুরস্কের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। ইরান-তুরস্ক সম্পর্কে নাটকীয় পরিবর্তন মধ্যপ্রাচ্যেও দুই দেশকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাবলিতে ইরান ও রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তুরস্কও সহযোগিতা ও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে চায়; ইতোমধ্যে তা প্রমাণ হয়েছে। সুন্নি মতাবলম্বী কাতার ও শিয়া মতাবলম্বী ইরানের সাথে সম্পর্ক স্থাপন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব প্রশমিত হবে। তুরস্ক ব্যবসার স্বার্থে মধ্যস্থতা করায় তিন দেশের মধ্যে ভবিষ্যতে সামরিক চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে। তুরস্ক-ইরান স্থলপথ চালুর ফলেই কাতারবিরোধী অবরোধ ব্যর্থ হয়। কাতারকে একঘরে করার চেষ্টার কঠোর নিন্দা করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, কাতারের ওপর এই অবরোধ অমানবিক এবং অনৈসলামিক। তাদের বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা ইসলামি মূল্যোধের বিরোধী। এটা কাতারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার শামিল।
মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে ইরান ও তুরস্কের সম্পর্ক এগিয়ে চলেছে। চলমান আঞ্চলিক সমস্যা ইরান ও তুরস্কের মধ্যকার সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারেনি এবং তেহরান-আঙ্কারার সম্পর্ক বাড়ানোর পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। কাতারের সাথে আরব বিশ্বের সাতটি দেশের কূটনৈতিতক সম্পর্ক ছিন্নের পর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। অন্য দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের তিক্ততা থেকে তুরস্ক-ইরানের দিকে ঝুঁঁকছে কাতার। কাতারের দুর্দিনে পাশে থেকেছে তুরস্ক। সমুদ্রপথে কাতারে খাবার পাঠিয়েছে ইরান। আরব বিশ্বের এ রকম সিদ্ধান্তে কাতারের সাথে ইরান ও তুরস্কের সম্পর্ক আরো গাঢ় হয়েছে। তুরস্ক, ইরান ও কাতার যদি গ্যাস নিয়ে ভিন্ন চিন্তা করে, তাহলে অনেকটাই চাপে পড়ে যাবে আরব বিশ্বের দেশগুলো। কুর্দিস্তানের গণভোট নিয়ে নতুনভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মধপ্রাচ্য। ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান এলাকার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একজোট হয় ইরাক-ইরান-তুরস্ক। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা খামেনি বলেছেন, ‘কিছু বিদেশী শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের মতো আরেকটি অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমেরিকা ও ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যেই গতবছরের শেষের দিকে ইরাকের কুর্দিস্তানে বিচ্ছিন্নতাকামী গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
নানা দিক থেকেই ইরান-তুরস্ক-রাশিয়ার মধ্যে যোগাযোগ বেড়েছে। ইরান-রাশিয়ার কৌশলগত সহযোগিতায় তুরস্ক যুক্ত হওয়ায় আমেরিকাও কিছুটা চিন্তিত। যেকোনো বিচারেই ইরান-তুরস্কের একসাথে পথচলায় আন্তরিকতা ও আগ্রহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেন নাটকীয় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
আঞ্চলিক ইস্যু ছাড়াও বৈশ্বিক বা মুসলিম উম্মাহর বিভিন্ন ইস্যুতে যৌথভাবে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে আঙ্কারা-তেহরান। সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের অসামরিকীকরণ জোনে ৫০০ করে সামরিক পুলিশ মোতায়েনে সম্মত হয়েছে রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরান। আফগানিস্তানের বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থানকে সমর্থন করেছে চীন, ইরান ও তুরস্ক। রোহিঙ্গাদের রক্ষায় সিদ্ধান্ত জানায় ইরান-তুরস্ক-মালয়-ইন্­দোনেশিয়া। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর হত্যা নির্যাতন বন্ধের বিষয়ে তুরস্ক-মালয়েশিয়া-ইন্­দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে টেলিফোনে আলাপ করেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, রোহিঙ্গাদের মতো নির্যাতিত মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সাথে টেলিফোনে আলাপকালে রোহিঙ্গা ইস্যুতে হতাশা ও উদ্বেগের কথা তুলে ধরে ইরানের
প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেন, বিশ্বের যেকোনো জায়গায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে নির্যাতন হোক না কেন, ইরান তা সহ্য করবে না।
এ দিকে ইরান-তুরস্কের ঘনিষ্ঠতাকে উদ্বিগ্ন ইসরাইল ভালো চোখে দেখছে না। তুরস্কের সাথে ইরানের সম্পর্ক উন্নয়নে তেলাবিব যথেষ্ট অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। ইরান এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারকে আরো শক্তিশালী করতে চাচ্ছে এবং হিজবুল্লাহ এবং লেবাননকে সহযোগিতা করতে ইরাক ও সিরিয়ার সাথে স্থলযোগাযোগ স্থাপন করতে চাচ্ছে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে যদি ইরান সামরিক সম্পর্ক গভীর করতে সফল হয়, যার শীর্ষে রয়েছে আঙ্কারা; তাহলে তা ইসরাইলের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের হুমকি হবে। সমরশক্তিতে প্রভাবশালী ইরান-তুরস্ক রাশিয়ার সাথে হাত মিলিয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। তুরস্ক সরকার পাশ্চাত্যঘেঁষা নীতি থেকে সরে এসেছে।
.
লেখা: নেওয়াজ শরীফ রফি.
MSE,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
(তথ্য ও উপাত্ত সহযোগিতায়:উইকিপিডিয়া­।)
 ======================================
৩৮তম বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি
মধ্যপ্রাচ্য (ইন্টারনেট থেকে)
---------_-------------_-------------_-------------_--------
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি বাকী পৃথিবীর সকল রাজনীতির চেয়েও বেশী জটিল। দাবা খেলায় উভয় পক্ষই যেমন মধ্যমাঠের নিয়ন্ত্রণে ব্যতিব্যস্ত থাকে, আধুনিক সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে ঠিক তেমনি ভাবে পৃথিবীর শক্তিধর দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যকে করতলে নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আজকের মধ্যপ্রাচ্য সংকটের সূর্যোদয় হয়েছিলো ঠিক একশো বছর আগে ১৯১৬ সালের ১৬ মে যেদিন ‘সাইকস-পিকট চুক্তি’ (Sykes- Picot Agreement) কার্যকর হয়েছিল।
পৃথিবীতে তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে, শক্তিধর দেশগুলো দুই শিবিরে বিভক্ত- মিত্রশক্তি (Allies) ও কেন্দ্রশক্তি (Central Powers)। কেন্দ্রশক্তিতে ছিল অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, জার্মানি, বুলগেরিয়া ও অটোম্যান সাম্রাজ্য (মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ অঞ্চল যার অন্তর্ভূক্ত ছিল); অন্যদিকে মিত্রদের মধ্যে ছিল যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, সার্বিয়া, ফ্রান্স, ইটালি, বেলজিয়াম ও যুক্তরাষ্ট্র।
১৯১৫ সালের শেষের দিকে ঘটনা। তখনও বিশ্বযুদ্ধের জয়-পরাজয়ের কোনো রূপরেখা ফুটে ওঠেনি। এরই মধ্যে যুদ্ধোত্তর মধ্যপ্রাচ্য ভাগাভাগিতে নেমে পড়ে সে সময়ে মিত্রশক্তির দুই প্রভাবশালী দেশ- যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। পরে রাশিয়া এই ভাগ-বাটোয়াতে অংশগ্রহণ করে। মধ্যপ্রাচ্য এ ভাগাভাগির মূল দায়িত্ব এসে পড়ে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের দুই কূটনীতিকের উপর। এদের একজন মার্ক সাইকস (Mark Sykes) আর অন্যজন জর্জ পিকট (Georges-Picot)। এদের মধ্যে কর্নেল সাইকস ভাড়াটে বৃটিশ কূটনীতিক আর পিকট ছিলেন ‘অপরিণত’ পেশাদার ফরাসি কূটনীতিক। সামরিক-বেসামরিক যৌথ মস্তিস্কে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে জঘণ্যতম যে গোপন দলিল লেখা হয়েছিল তা ‘সাইকস-পিকট চুক্তি’ (অফিশিয়ালি ‘এশিয়া মাইনর চুক্তি’) বা মধ্যপ্রাচ্য ভাগাভাগির গোপন চুক্তি নামে পরিচিত। রাশিয়ার বলশেভিক আন্দোলনের (১৯১৭) নেতারা এ চুক্তি গ্রহণ করেনি বলে তা তারা প্রকাশ করে দিয়েছিল।
সাইকস ও পিকট মিলে ভূ-মধ্যসাগরের উপকূল থেকে শুরু করে ইসরাইলকে দু’ভাগ করে সিরিয়া-জর্ডানের সীমারেখা ধরে সোজাসুজি ইরাকের মসুল নগরীর নীচ ও কিরকুকের উপর দিয়ে ইরানের সীমান্ত পর্যন্ত মোটামুটি একটি সরল রেখা টেনে মধ্যপ্রাচ্যকে দু’ভাগে বিভক্ত করে। উপরের অংশে অবস্থিত তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাংশ, সিরিয়া, ইরাকের মসুল, লেবানন চলে যায় পিকটের (ফ্রান্সের) পকেটে আর নিচের ইসরাইলের দক্ষিণাংশ, জর্ডান, ইরাক, কুয়েত ও সৌদি আরবের পারস্য উপকূলীয় অংশ নেয় সাইকস (যুক্তরাজ্য)। এ ভাগাভাগিতে রাশিয়ারও একটা অংশ ছিল। সে তুরস্কের পশ্চিমাংশ ও ইস্তানবুল নিয়ে নেয়। চুক্তির বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে আরেক মিত্রশক্তি ইটালি শেষমেষ (১৯১৭ সালে) তুরস্কের দক্ষিণে ভূ-মধ্যসাগরের উপকূলীয় ভূ-খণ্ডটুকু নিয়ে নেয়। এভাবে সাইকস-পিকটের এক চুক্তিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে তুরস্ক থেকে মধ্যপ্রাচ্য (উত্তর আফ্রিকা ও সৌদি আরবের অধিকাংশ ভূ-খণ্ড বাদে) চার মিত্রশক্তির করতলে চলে আসে। এর পরের একশো বছর শুধুই রক্তপাতের ইতিহাস।
আরব বিদ্রোহ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে রক্তপাতের শুরু হয়। ১৯১৬ সালের জুন মাসে মক্কার আমীর শরীফ হুসেইনের (হুসেইন বিন আলী) নেতৃত্বে আরব বিদ্রোহ শুরু হয়। এ বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিল অটোম্যান সাম্রাজ্যের (তুরস্কের) হাত থেকে সমগ্র আরব ভূ-খণ্ডের স্বাধীনতা লাভ; অর্থাৎ, আরবরা জুন মাসে সেই ভূ-খণ্ডের জন্য লড়াইয়ে নেমেছিলো যা মে মাসেই তিনজনের মধ্যে গোপনে ভাগাভাগি হয়ে গেছে। শরীফ হুসেইন অখণ্ড আরবের স্বাধীনতায় বৃটিশদের সহযোগিতা চেয়েছিল। এ নিয়ে মিশরে তৎকালীন বৃটিশ হাইকমিশনার হেনরি ম্যাকমোহনের সাথে তার কয়েক দফা পত্র যোগাযোগও হয়। এটি ‘হুসেইন-ম্যাকমোহন পত্রযোগাযোগ’ (Hussein–McMahon Correspondence) নামে পরিচিত। ম্যাকমোহন তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আরবদের পূর্ণ সহযোগিতা শর্তে হুসেইনকে অখণ্ড আরব ভূ-খণ্ডের স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
বৃটিশ-ফরাসিরা কথা রাখেনি। বরং তাদের দ্বৈতনীতি এমন ছিল যে তারা একদিকে আরব ভূ-খণ্ডের স্বাধীনতা আন্দোলনে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরবদেরকে তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধে টেনে আনে, অন্যদিকে আরব ভূ-খণ্ডকে নিজেদের মতো ভাগবাটোয়ারা করে উপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করতে থাকে। সে সময়ে বৃটিশ-ফ্রান্স-আরব কর্তৃক হেজাজ রেলপথ ধ্বংস, আকাবা বন্দর দখল ও তৎপরবর্তীকালে বৃটিশ-ফ্রান্সের কূটনীতিক ছলাকলার পটভূমিতে ডেভিড লীনের পরিচালনায় নির্মিত “লরেন্স অভ অ্যারাবিয়া (Lawrence of Arabia, 1962)” ছবিটি সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে।
কেবল দ্বৈতনীতিতে থেমে থাকেনি বৃটিশরা। মধ্যপ্রাচ্যে রাজনীতিতে তারা তৃতীয় যে নীতি যোগ করে তা ‘বেলফোর ঘোষণা’ (Balfour Declaration, 1917) নামে পরিচিত। বেলফোর ঘোষণা হলো প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের স্থায়ী আবাসভূমির অঙ্গীকার করে বৃটেনের প্রতাপশালী ইহুদি নেতা ওয়াল্টার রথসচাইল্ডকে লেখা বৃটিশ পররাষ্ট্র সচিব আর্থার জেমস বেলফোরের এক চিঠি। চিঠিতে বেলফোর লিখেছিলেন- “His Majesty’s Government view with favor the establishment in Palestine of a national home for the Jewish people…”। এরই সূত্র ধরে ১৯৪৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল রাষ্ট্র গড়ে ওঠে।
মধ্যপ্রাচ্যে আরবীয়রা যেমন বৃটেন বা ফ্রান্সের শাসন মেনে নেয়নি তেমনি তারা ইসরাইল রাষ্ট্রকেও কখনো মেনে নিতে পারেনি। ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বৃটিশ-ফরাসিরা উপনিবেশিক শাসন শেষ করতে বাধ্য হলেও তারা সেখানে দুটি বিষবৃক্ষ রেখে গেছে- আরবীয়দের জাতিগত, গোত্রগত বিভক্তি ও অযাচিত একটি ইসরাইল রাষ্ট্র। আজকের মধ্যপ্রাচ্য সংকটের তিনটি মূল কারণের মধ্যে প্রথম দুইটি বৃটিশদের আর তৃতীয়টি ঈশ্বরের সৃষ্টি। শতভাগে বিভক্ত এ সকল জাতিতে জাতিতে, গোত্রে গোত্রে মারামারি-হানাহানি করার জন্য, বিদেশী বেনিয়াদেরকে সে সকল বিষয়ে মধ্যস্থতা, হস্তক্ষেপ করার মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ঈশ্বর মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে তেলের খনি ছড়িয়ে দিয়েছে। অপরিমিত সম্পদই যদি তিনি দিলেন তবে তা সংরক্ষণ, উত্তোলন, যোগ্য ব্যবহার ও যথাযথ বণ্টনের বিদ্যেটুকু কেন যে তাদের দিলেন না তা বোধগম্য নয়!
সাইকস-পিকট চুক্তির মূল দূর্বলতাই ছিল এ অঞ্চলে ক্রমবর্ধিষ্ণু আরব জাতীয়তাবাদকে অগ্রাহ্য করা। পৃথিবীর প্রতিটি স্বাধীনতা আন্দোলনের পিছনে একটি দীর্ঘ বঞ্চনার ইতিহাস আছে। তুর্কিরা আরব জাতিসত্ত্বাকে অগ্রাহ্য করে অটোম্যান সাম্রাজ্যের যে সর্বনাশ ডেকে এসেছিল, সেই একই ভুলে বৃটিশ-ফরাসিরাও আরব ভূ-খণ্ডে শতবর্ষী সংকটের সৃষ্টি করেছিল। সে জন্য বলা হয়, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো যে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। তা না হলো র‌্যাডক্লিফ সাহেব এতটা অবিবেচকের মতো ভারত-পাকিস্তান ভাগাভাগি করতো না; পাকিস্তানও বাংলাদেশের বাঙালি জাতীয়তাবাদকে কোনদিনও পদদলিত করতো না। দমননীতিতে কোন রাষ্ট্র কখনোই তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে পারেনি। রোমান সম্রাট ক্যালিগুলা, কম্বোডিয়ার পলপট, জার্মানির হিটলার, রাশিয়ার স্ট্যালিন, উগান্ডার ইদি আমিন, রোমানিয়ার চসেস্কু, চীনের মাও সেতুং, লিবিয়ার গাদ্দাফি … ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনি।
NILOY SEN GUPTA

No comments:

Post a Comment

৯ম-১০ম শ্রেনীর বিজ্ঞান #১ম অধ্যায়(১-৬০) #২য় অধ্যায়

# ১ম অধ্যায়(১-৬০)। ১।প্রাণীদেহে শুষ্ক ওজনের কতভাগ প্রোটিন - ৫০%। ২।খাদ্যের উপাদান - ৬টি। ৩।আমিষের গঠনের একক - অ্যামাইনো এসিড। ৪।মানব...

Trending